বিদেশ ডেস্ক ॥ এগারো দিন হামলা পাল্টা হামলার পর অবশেষে থেমেছে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ও দখলদার ইসরায়েলের যুদ্ধ। হামাসের দেয়া শর্ত মেনেই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল। হামাসের পলিটিকাল ব্যুরোর প্রধানের গণমাধ্যম বিষয়ক উপদেষ্টা তাহের আল-নুনু গাজায় সাংবাদিকদের বলেছেন, গাজায় হামলা বন্ধের পাশাপাশি আল-আকসা মসজিদ ও শেখ জাররাহ এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি ইসরাইল দিয়েছে, তা যতক্ষণ পর্যন্ত তেল আবিব মেনে চলবে, ততক্ষণ পর্যন্ত হামাসও যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন করবে। আরব নিউজে দেয়া তথ্য অনুযায়ী এগারো দিনের হামলায় ফিলিস্তিনে এক লাখ ২০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে, গাজায় নিহত ২৩২ এবং পশ্চিম তীরে নিহত ২৫, আহত হয়েছেন ১৯০০ ফিলিস্তিনি। অপরদিকে ইসরায়েলে হামাস অন্তত ৪ হাজার ৩০০ রকেট ছুঁড়েছে। এতে সেখানে নিহত হয়েছে ১২ জন এবং আহত হয়েছে ৩৩০ জন। গাজায় অনেকগুণ বেশি ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও এই যুদ্ধকে ইসরায়েলের পরাজয় ও পিছু হটা হিসেবে দেখছে ফিলিস্তিনিরা। পরমাণুসহ প্রতিরক্ষা খাতে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ইসরায়েল মাথা নত করেছে বছর বছর ধরে কারাগারের মতো অবরুদ্ধ গাজার যোদ্ধাদের কাছে। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা হিসেবে আয়রন ডোমের নাম জাহির করে ইসরায়েল। হামাসের মাত্র ৩০০ থেকে ৮০০ ডলার মূল্যের রকেটের কাছে নাকানিচুবানি খেয়েছে তাদের কোটি কোটি ডলারের এই আয়রন ডোম। আনাদুলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, হামাসের ছোঁড়া স্বল্পপাল্লার প্রতিটি রকেট ধ্বংস করতে পাল্টা মিসাইল ব্যবস্থায় আড়াইশো গুণ বেশি খরচ করেছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনের ৮শ’ ডলার দামের একটি রকেট নিশ্চিতভাবে ঠেকাতে আয়রন ডোমকে এক লাখ ডলারের দুটি মিসাইল ছুঁড়তে হয়েছে। ফিলিস্তিনের হামাস ও ইসলামিক জিহাদ দলগুলোর ছোঁড়া স্বল্পপাল্লার রকেট আকাশেই ধ্বংস করতে তামীর ইন্টারসেপ্টেড মিসাইল ব্যবহার করেছে ইসরায়েল। ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ থেকে ছোঁড়া এসব মিসাইলের একেকটির দাম ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ মার্কিন ডলার। ইসরায়েলের ডিফেন্স ফোর্সের তথ্য বলছে, গেল সপ্তাহে এমন অন্তত ১ হাজারের বেশি তামীর মিসাইল ছুঁড়েছে আয়রন ডোম। শুধু তাতেই খরচ হয়েছে ১০ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৮৬০ কোটি টাকা। অন্যদিকে হামাসের ছোঁড়া স্বল্পপাল্লার কাসাম রকেটগুলোতে নেই গাইডেন্স সিস্টেম। সাধারণ ধাতব পাইপ ফ্রেমে তৈরি এসব রকেট তৈরিতে খরচ পড়েছে মাত্র ৩০০ থেকে ৮০০ ডলার। কয়েকদিনের এই হামলায় হামাসের খবর হয়েছে ৩০ কোটি টাকার কম। হামাসের এমন সস্তা ও স্বল্পপাল্লার রকেট আকাশেই ধ্বংস করতে কখনো কখনো দুটি মিসাইলও ছুঁড়েছে ইসরাইল। এতে হামাসের ৬৮ হাজার ৮০০ টাকা দামের একটি স্বল্পপাল্লার রকেট নিশ্চিতভাবে আটকাতে ইসরায়েলকে ব্যয় করতে হয়েছে ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। যুদ্ধ বিরতি হলেও যোদ্ধাদের আঙুল এখনো ট্রিগারে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হামাসের রাজনৈতিক দপ্তরের সদস্য ইজ্জাত আর রিশ্ক। গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরপরই এক মন্তব্যে তিনি বলেন, আমরা এখনও ট্রিগারেই হাত রেখেছি। দখলদার ইসরায়েলকে অবশ্যই অধিকৃত বায়তুল মুকাদ্দাসে সহিংসতার অবসান ঘটাতে হবে।
Leave a Reply